বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে দেখেন কান্নার রোল

‘হ্যালো অক্সিজেন’ দলের স্বেচ্ছাসেবকেরা সিলিন্ডার নিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দেখেন কান্নার রোল। মাত্র ৫ মিনিট আগে মারা গেছেন তিনি। হয়তো আর ১০ মিনিট আগে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে পৌঁছাতে পারলেও তাঁকে বাঁচানো যেত। পরিবারের সদস্যদের শোক ছুঁয়ে যায় স্বেচ্ছাসেবকদেরও। গতকাল মঙ্গলবার ফেনীর পরশুরাম পৌরসভায় এ ঘটনা ঘটে।

মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম নাম গিয়াস উদ্দিন (৩৫)। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন। আজ বুধবার সকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরশুরাম উপজেলায় দাফন কাজে নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকেরা লাশ দাফন করেন। গিয়াস উদ্দিন পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড উত্তর কোলাপাড়া গ্রামের বেলায়েত হোসেন চৌধুরীর ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও এক ছেলে রয়েছে। চার দিন আগে গত শুক্রবার তাঁর বাবা বেলায়েত হোসেন চৌধুরীও মারা যান। তাঁর বাবারও জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ করোনার উপসর্গ ছিল।

এলাকাবাসী ও স্বজনেরা জানান, বেশ কিছুদিন থেকে সত্তরোর্ধ্ব বেলায়েত হোসেন চৌধুরী জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ নানা উপসর্গে ভুগছিলেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়িতেই তিনি মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর ছেলে গিয়াস উদ্দিনও অসুস্থ হয়ে পড়েন। করোনা পরীক্ষার জন্য গত রোববার পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নমুনা দেন। মঙ্গলবার পাঠানো প্রতিবেদনে তাঁর করোনা শনাক্ত হয়।

পরিবার সূত্র জানায়, করোনা পজিটিভ নিশ্চিত হয়েও তিনি নিজের বাড়িতেই ছিলেন। মঙ্গলবার রাতে শ্বাসকষ্ট অনুভূত হলে স্বজনেরা অক্সিজেনের জন্য পরশুরাম উপজেলা সদরে ‘হ্যালো অক্সিজেন’ সেবায় খবর দেন। হ্যালো অক্সিজেনের স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রধান ইয়াছিন শরীফ মজুমদার ও তাঁর সহযোগীরা সিলিন্ডার নিয়ে রাত ১০টার দিকে গিয়াস উদ্দিনের বাড়িতে পৌঁছান। ততক্ষণে মরদেহের পাশে পরিবারের সদস্যদের কান্নার রোল পড়ে যায়।

ইয়াছিন শরীফ মজুমদার বলেন, আরও অন্তত ১০ মিনিট আগে পৌঁছাতে পারলেও হয়তো এমন দৃশ্যের মুখোমুখি হতে হতো না।

পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. আবদুল খালেক বলেন, হঠাৎ করে রাতে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গিয়াস উদ্দিন মারা যান। ফলে চিকিৎসা দেওয়ারও আর সুযোগ পাওয়া যায়নি। তিনি জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সবাইকে দ্রুত স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার অনুরোধ জানান।

পরশুরাম উপজেলায় এ পর্যন্ত ৩২৯ জনের শারীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ৭ জন। ২১২ জন সুস্থ হয়েছেন। বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন ৪ জন। এ ছাড়া ১০৪ জন রোগী হোম আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

Copyright © priyokagoj.com All Right Reserved.
Developed By Monoputo