করোনা ইউনিটে চিকিৎসক–সংকটে সেবা ব্যাহত

ময়মনসিংহে করোনার সংক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। এতে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে রোগীর চাপও বেড়েছে। এ পরিস্থিতিতে করোনা ইউনিটে শয্যাসংখ্যা বাড়িয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু পর্যাপ্তসংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় এ ইউনিটের রোগীরা যথাযথ চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন না।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিট সূত্র জানায়, রোগীর চাপ বাড়তে থাকায় এ ইউনিটের রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। এ ইউনিটে চাহিদার অর্ধেক চিকিৎসক থাকায় সাধারণ ওয়ার্ড থেকে চিকিৎসকদের এনে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

রোগীর চাপ বাড়ার কথা স্বীকার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক জাকিউল ইসলাম বলেন, এক হাজার শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার রোগী ভর্তি থাকেন। রোগীর চাপ বাড়ায় করোনা ইউনিটে শয্যার সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। অতিরিক্ত রোগীর সেবা দিতে এখন বাড়তি চিকিৎসকেরও প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। সীমিত জনবল নিয়েও চিকিৎসকেরা আন্তরিকভাবে  চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন।

করোনা ইউনিটে গতকাল মঙ্গলবার ময়মনসিংহ নগরের কেওয়াটখালী এলাকার বাসিন্দা আব্দুল কাদির (৬০) মারা যান। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লাশ নিয়ে যাওয়ার সময়ে তাঁর স্বজনেরা ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, রোগীর তুলনায় চিকিৎসক অপ্রতুল। অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের বদলে নার্সদের ওপর নির্ভর করতে হয়।

করোনা ইউনিটে কয়েক দিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন হালুয়াঘাট উপজেলার মোফাজ্জল হোসেন। এখানে চিকিৎসাসেবার অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে মোফাজ্জল হোসেনের স্ত্রী নাহিদা ইয়াসমিন জানান, রোগীদের চাপ বাড়ায় স্বাভাবিকভাবেই অল্পসংখ্যক চিকিৎসকের পক্ষে কাঙ্ক্ষিত সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা দিতে এখানে আরও চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া উচিত।

করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন আরেক রোগী নেত্রকোনার আব্দুস সাত্তারের স্বজন সবুজ মিয়া বলেন, প্রতিদিন যে হারে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, সে হারে চিকিৎসকের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে না।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, ময়মনসিংহের ছয় জেলা ছাড়াও গাজীপুর, সুনামগঞ্জ ও কুড়িগ্রাম জেলার রোগীরা এখানে ভর্তি হন। হাসপাতালের নতুন ভবনে করোনা ইউনিটে ১০টি আইসিইউ শয্যা এবং সাধারণ ওয়ার্ডে ২১০টি শয্যা আছে। রোগীর চাপ বাড়তে থাকায় চার ধাপে এখানে আইসিইউ শয্যা বাড়িয়ে ২০টি এবং সাধারণ ওয়ার্ডে শয্যাসংখ্যা বাড়িয়ে ৩৫০টি করা হয়েছে। এ ছাড়া এখানে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থাসহ ১৩টি ভেন্টিলেটর এবং ১৩টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর আছে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, করোনা ইউনিটে বুধবার সকাল পর্যন্ত ৩৪১ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১৯ জন আইসিইউতে এবং বাকিরা সাধারণ ওয়ার্ডে আছেন। অথচ এক সপ্তাহ আগেও এই সংখ্যা ১৫০-১৬০ ছিল। আবার এর এক সপ্তাহ আগে এই রোগীর সংখ্যা ছিল ১০০-১১০ জন । মঙ্গলবার নতুন করে এক দিনেই ৫১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। সোমবারে ৭০ জন এবং রোববার ৪৯ জন ভর্তি হয়েছেন।

ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার ৭২১টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে ১৯৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২৭ দশমিক ৩২ শতাংশ। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মঙ্গলবার সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে সোমবার ৭ জন, রোববার ১৫ জন এবং শনিবার ১১ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে গত ১১ দিনে ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ বিভাগে বুধবার সকাল পর্যন্ত ১৫ হাজার ৯৫৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং সুস্থ হয়েছেন ১২ হাজার ১৭০ জন। এ ছাড়া বিভাগের চার জেলায় এ পর্যন্ত করোনায় ২২০ জনের মৃত্যু হয়েছে।

করোনা ইউনিটের ফোকাল পারসন মহিউদ্দিন খান বলেন, প্রতিদিনই করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। অর্ধেক জনবল দিয়েই ভর্তি হওয়া রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। অন্যান্য সাধারণ ওয়ার্ড থেকে কর্মরত চিকিৎসকদের এনে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। করোনা ইউনিটের পাঁচটি ফ্লোরে প্রতিদিন তিন পালায় ৪০ জন চিকিৎসকের প্রয়োজন হয়। তাঁদের মধ্যে করোনা ডেডিকেটেড চিকিৎসক আছেন মাত্র ১৯ জন। সাধারণ ওয়ার্ড থেকে বাকি ২১ জন চিকিৎসককে এনে ঘাটতি পূরণ করা হচ্ছে।

করোনা এবং উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পেছনে চিকিৎসাসেবার ঘাটতি রয়েছে কি না জানতে চাইলে মহিউদ্দিন খান জানান, যেসব রোগী ভর্তি হচ্ছেন, তাঁদের অধিকাংশই ‘সিভিয়ার’ কিংবা ‘ক্রিটিক্যাল’ রোগী। এ ধরনের রোগীদের সুস্থ করে তোলার জন্য লোকবল কম থাকা সত্ত্বেও তাঁরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। রোগীদের চাপ বাড়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিকিৎসক নিয়োগের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

 

Copyright © priyokagoj.com All Right Reserved.
Developed By Monoputo