যেভাবে ফাঁদে ফেলা হয় ‘ডেটিং অ্যাপে’

ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করে ছেলেদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতেন মেয়েটি। পরে একান্তে সময় কাটানোর কথা বলে তাঁকে (ছেলে বন্ধু) ডেকে নিয়ে যেতেন নির্জন স্থানে। পরিকল্পনা অনুযায়ী মেয়েটির বাবাসহ চক্রের সদস্যরা ভাড়া করা গাড়ি নিয়ে আগেই সেখানে অবস্থান করতেন। সেখান থেকে ভুক্তভোগীকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হতো কোনো ফ্ল্যাটে। পরে আটকে রেখে চক্রের মেয়ে সদস্যরা তাঁর সঙ্গে আপত্তিকর ছবি তুলতেন। পরে ছেলেটির স্বজনদের কাছে টাকা দাবি করতেন অপরাধীরা।

এভাবে ডেটিং অ্যাপ (সম্পর্ক গড়ে তোলার অ্যাপ) ব্যবহার করে ফাঁদে ফেলে অপহরণ করে টাকা আদায়ের সঙ্গে জড়িত একটি চক্রের সন্ধান পাওয়ার কথা জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। পুলিশ বলছে, এক ব্যক্তি ও তাঁর মেয়ে চক্রের অন্যতম সদস্য। পুলিশ অন্তত ১৫টি বিদেশি ডেটিং অ্যাপ শনাক্ত করেছে।
 

ডিবি জানায়, গত মঙ্গলবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করেন এক ভুক্তভোগী। এরপর গত বুধবার রামপুরা এলাকা থেকে আবদুল জলিল হাওলাদার (৫৬) নামের এক ব্যক্তি, তাঁর মেয়ে সোনিয়া মেহের (১৮) ও তাঁদের এক সহযোগী ইউসুফ মোল্লাকে (৪৩) গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে অপরাধ কাজে ব্যবহৃত চারটি মুঠোফোন ও আটটি সিম উদ্ধার করা হয়।

ডিবি জানায়, গত এক বছরে ১০ জনকে অপহরণ করে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন চক্রের গ্রেপ্তার সদস্যরা। এই চক্রে চার নারী ও পাঁচ থেকে ছয়জন পুরুষ সদস্য আছেন। জিজ্ঞাসাবাদে চক্রের চার সদস্যের নাম পাওয়া গেছে। তাঁরা হলেন মামুন, রাজু, বীথি ও মিথিলা।

ডিবির সাইবার অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ডেটিং অ্যাপ ব্যবহার করে চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতেন চক্রের নারী সদস্যরা। পরে অপহরণ করে টাকা আদায় করতেন তাঁরা।

ডিবি সূত্র জানায়, অপহরণের পর ভুক্তভোগী ব্যক্তির পরিবারের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা নিতেন চক্রের সদস্যরা। টাকার একটি বড় অংশ নিতেন আবদুল জলিল হাওলাদার ও তাঁর মেয়ে সোনিয়া মেহের। অপহরণের কাজে ব্যবহৃত ফ্ল্যাটের ভাড়াসহ খরচ বাদ দিয়ে বাকি টাকা ভাগ করে নিতেন চক্রের অন্য সদস্যরা।
 

যেভাবে ফাঁদে ফেলা হয়

পুলিশ বলছে, ডেটিং অ্যাপে ৩০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন চক্রের সদস্যরা। তারপর হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলা শুরু করতেন সোনিয়া মেহের। এরপর ওই ব্যক্তিকে অপহরণ করা হতো। রাজধানীর রামপুরা, যাত্রাবাড়ী ও কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ফ্ল্যাট ভাড়া করে এভাবে অপরাধ চালিয়ে আসছিল চক্রটি।

ডিবি সূত্র জানায়, সম্প্রতি একটি বিদেশি ডেটিং অ্যাপে যুক্ত হন এক তরুণ। কিছু দিন পর ওই অ্যাপের মাধ্যমে পরিচয় হয় চক্রের সদস্য সোনিয়া মেহেরের সঙ্গে। ওই অ্যাপ থেকে মুঠোফোন নম্বর আদান-প্রদানের মাধ্যমে দুজনের মধ্যে শুরু হয় কথাবার্তা।

একপর্যায়ে বন্ধুত্ব থেকে প্রেম। তারপর একান্তে সময় কাটানোর কথা বলে কম জনবহুল এলাকায় ডেকে ওই তরুণকে অপহরণ করেন চক্রের সদস্যরা। তাঁকে আটকে রেখে পরিবারের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়। টাকা দিতে রাজি না হলে ওই তরুণকে মারধর করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপত্তিকর ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিলে দুই লাখ টাকা দেয় ওই তরুণের পরিবার। তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার আগে ভয়ভীতি দেখিয়ে চক্রের সদস্যরা বলেন, বাড়িতে ফিরে আরও টাকা দিতে হবে।

ওই তরুণ পুলিশকে জানান, বাড়িতে ফেরার পরও বারবার টাকা দাবি করে আসছিলেন চক্রের সদস্যরা। টাকা না দিলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন তাঁরা। পরে গত মঙ্গলবার যাত্রাবাড়ী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়।

Copyright © priyokagoj.com All Right Reserved.
Developed By Monoputo