পশ্চিমবঙ্গে যে কারণে হেরেছে মোদির দল

ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যু। করোনা নিয়ন্ত্রণে এই ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে তাঁর দল বিজেপি তাদের কাঙ্ক্ষিত ফল পায়নি।

বিবিসির খবর ও বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে বিজেপির হারের একটি কারণ ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। যার কারণে হঠাৎ মৃত্যু ও সংক্রমণ—দুটিই বেড়েছে। আর মোদি ব্যস্ত ছিলেন চার রাজ্য ও একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বিধানসভার নির্বাচন নিয়ে; বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন নিয়ে।

বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে মোদির দল কতটা ব্যস্ত ছিল, তার চিত্র উঠেছে এসেছে প্রথম আলোর কলকাতার সংবাদদাতার খবরে। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুসারে, মাসখানেকের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী প্রচারে মোদি গিয়েছেন ১৫ বার। আর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গ সফর করেছেন ৬২ বার। এখানেই শেষ নয়; এই নির্বাচনকে সামনে রেখে ১১৫ দিন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা–মন্ত্রীরা পশ্চিমবঙ্গ সফর করেছেন।

বিবিসির খবর, পশ্চিমবঙ্গে জয়ের লক্ষ্য নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালিয়েছে বিজেপি। কিন্তু অনেকটা হেসেখেলে এই নির্বাচনে জিতেছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেস। মোদির কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত এই মমতা।

পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও নির্বাচন হয়েছে আসাম, তামিলনাড়ু ও কেরালা রাজ্যে এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল পদুচেরিতে। আসামে জিতেছে বিজেপি। কিন্তু অন্য কোথাও বড় কোনো সাফল্য নেই বিজেপির।

নির্বাচনের এই যখন চিত্র, তখন করোনা কাঁপিয়ে দিচ্ছে ভারতকে। টানা ১০ দিন ধরে দেশটিতে সংক্রমণ তিন লাখের ঊর্ধ্বে। আর গত শনিবার মারা গেছেন ৩ হাজার ৬৮৯ জন রোগী, যা ভারতে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর রেকর্ড। সংক্রমণ ও মৃত্যুতে যেমন রেকর্ড হচ্ছে, তেমনি সংকট বাড়ছে স্বাস্থ্যসেবা খাতে। কারণ, ভারতজুড়ে হাসপাতালগুলোয় শয্যাসংকট দেখা দিয়েছে। শয্যা না পেয়ে হাসপাতালে আঙিনায় সেবা নেওয়ার চেষ্টা করছেন অনেক রোগী। তীব্র সংকট রয়েছে অক্সিজেনেরও। এ ছাড়া করোনার চিকিৎসাসংক্রান্ত ওষুধ ও সরঞ্জামেও সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে, সাধারণ এসব সরঞ্জাম পেতে যেতে হচ্ছে কালোবাজারিদের কাছে।

এই সংকটের অভিযোগ যাচ্ছে নির্বাচনের ঘাড়ে। বলা হচ্ছে, নির্বাচনী প্রচার ও ভোট গ্রহণের কারণে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ বেড়েছে। আর মোদি ও অমিত শাহ এই মহামারির চেয়ে নির্বাচনকে গুরুত্ব দিয়েছেন।

এর প্রভাব পড়েছে নির্বাচনের ফলে। বেসরকারি ফলাফল অনুসারে, ২৯৪টি আসনের মধ্যে ২১৩টি আসন পেয়েছে মমতার তৃণমূল কংগ্রেস। জয়ের পর তিনি বলেছেন, করোনা মোকাবিলা হবে প্রথম কাজ।

বিবিসির বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, নির্বাচনী প্রচারের সম্মুখভাগে ছিলেন মোদি। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে তিনি ভোট চেয়েছেন। এ ছাড়া নিজের দাড়ি বড় করেছেন। তার সমর্থকেরা তাঁকে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে তুলনা করেছেন। কিন্তু দিন শেষে জিততে পারল না বিজেপি।

করোনা মহামারি ও ভোটের চিত্রটা সমান্তরালে দেখলে দেখা যাবে, হাসপাতালে শয্যা ও অক্সিজেনের সংকটে মানুষ হাহাকার করছেন। মোদি বারংবার পশ্চিমবঙ্গ সফর করছেন। বড় বড় সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন। বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন।

Copyright © priyokagoj.com All Right Reserved.
Developed By Monoputo