প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর উপকণ্ঠে নতুন শহর পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ) ২০২২ উদ্বোধন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাণিজ্য মেলার ২৬তম আসরের উদ্বোধন করেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী রপ্তানি নীতিমালা অনুযায়ী রপ্তানি উৎসাহিত করতে আইসিটি পণ্য ও সেবাকে ২০২২ সালের ‘প্রোডাক্ট অব দ্য ইয়ার’ ঘোষণা করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে প্রযুক্তির যুগ বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, ৪র্থ শিল্প বিপ্লব সামনে রেখে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরিতেও আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। যাতে আমরা কোনভাবেই যেন পিছিয়ে না থাকি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
করোনার মাঝেও অর্থনীতিকে সীমিত আকারে হলেও এগিয়ে নেওয়ায় তিনি শিল্প উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে মালিক-শ্রমিক সবাইকে কৃতিত্ব দিয়ে বলেন, এর মাঝেও আমাদের অর্থনীতি কিন্তু একেবারে কখনো স্থবির হয়নি। স্বল্পমাত্রায় হলেও আমরা সব চালু রাখতে সক্ষম হয়েছি, যেখানে পৃথিবীর বহু দেশ কিন্তু এই সমস্যায় পড়েছে।
করোনা পূর্ববর্তী সময়ে তার সরকার প্রবৃদ্ধিকে ৮ ভাগে তুলতে সক্ষম হয়েছিল উল্লেখ করে ভবিষ্যতে এটি অতিক্রমেরও আশবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
দেশের রপ্তানি পণ্যের প্রবৃদ্ধি ও বাজার বৈচিত্র্যের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ও অন্যান্য সহায়ক সংস্থা এ মেলার আয়োজন করছে।
দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন, উৎপাদনে সহায়তার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এবারই প্রথমবারের মতো স্থায়ী ভেন্যুতে বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগে এই মেলা হতো রাজধানীর আগারগাঁওয়ে।
এর আগে গতকাল শুক্রবার বাণিজ্য মেলা উপলক্ষে মেলার এক্সিবিশন সেন্টারে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, গত বছর কোভিড মহামারির কারণে মেলার আয়োজন করা সম্ভব না হলেও এখন প্রথমবারের মতো স্থায়ী ভেন্যুতে (বিবিসিএফইসি) বাণিজ্য মেলা হচ্ছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, এ বছর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে সামনে রেখে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পূর্বাচলে নবনির্মিত বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে মাসব্যাপী এ মেলা চলবে।
শীতাতপনিয়ন্ত্রিত এক্সিবিশন সেন্টারের ১৪ হাজার ৩৬৬ বর্গমিটার আয়তনের দুটি হলে সব স্টল বরাদ্দ হয়েছে। মেলা কমপ্লেক্সের বাইরে (সম্মুখ ও পেছনে) প্যাভিলিয়ন, মিনি প্যাভিলিয়ন ও ফুড স্টল নির্মাণ করা হয়েছে। মেলার বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোট ২৩টি প্যাভিলিয়ন, ২৭টি মিনি প্যাভিলিয়ন, ১৬২টি স্টল ও ১৫টি ফুড স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এবারের মেলায় প্রদর্শিত পণ্যের মধ্যে রয়েছে দেশীয় বস্ত্র, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিকস অ্যান্ড বিউটি এইডস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস, ফার্নিচার, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহসামগ্রী, চামড়া, জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, স্পোর্ট গুডস, স্যানিটারি ওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামাইন পলিমার, হারবাল ও টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, হস্তশিল্পজাত পণ্য, হোম ডেকর ইত্যাদি।
সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন রাত ১০টা পর্যন্ত। মেলার প্রবেশমূল্য প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য ৪০ টাকা ও শিশুদের ২০ টাকা।
মেলায় দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে প্রতিদিন ৩০টি বিআরটিসি বাস ও অন্যান্য যাত্রীবাহী বাস চলাচল করবে। ভাড়া জনপ্রতি ৪০ টাকা। নামতে হবে কাঞ্চন ব্রিজে। সেখান থেকে ১০ টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে যেতে হবে।