গ্যাস সংকটে চরম ভোগান্তি

মৌলভীবাজার শহর, সিএনজি ফিলিং স্টেশন, বিভিন্ন চা-বাগানসহ অনেক এলাকায় গ্যাস-সংকট চলছে। এ সংকট কাটাতে জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর গ্যাসক্ষেত্র থেকে নতুন সংযোগ স্থাপনের কাজ স্থানীয় গ্রামবাসীর বাধার কারণে আটকে গেছে। আর রাজনগর থেকে মৌলভীবাজার গ্যাসলাইন স্থাপনের কাজও সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অনুমোদন না পাওয়ায় বিলম্বিত হচ্ছে। এতে গ্যাস-সংকটের দুর্ভোগ দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েক মাস ধরে শহরের বিভিন্ন এলাকায় দুপুর হলেই চুলায় গ্যাস থাকে না। বেলা ১১টা থেকে এ সমস্যা হচ্ছে। বেলা তিনটার পর একটু একটু করে গ্যাস বাড়ে। অথচ এ সময়ে বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন কারখানায় গ্যাসের প্রয়োজন অন্য সময়ের চেয়ে বেশি। এ ছাড়া বিভিন্ন সিএনজি স্টেশনসহ বিভিন্ন কারাখানায়ও গ্যাসের স্বাভাবিক চাপ নেই। কমলগঞ্জ উপজেলার ভানুগাছ বাজার, শমশেরনগর এলাকা এবং বিভিন্ন চা-বাগানেও একই সংকট চলছে।

জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ সংকট কাটাতে কালাপুর গ্যাসক্ষেত্র থেকে সরাসরি শ্রীমঙ্গল-মৌলভীবাজার লাইনের সঙ্গে নতুন করে গ্যাস–সংযোগ (হুকআপ) দেওয়া হবে। গত ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে কালাপুরের জাগছড়া চা-বাগান–সংলগ্ন স্থানে লাইন সংযুক্ত করার কাজ শুরু হয়। কিন্তু কালাপুর গ্রামবাসী ২০ ডিসেম্বর কাজ বন্ধ করে দেন। তাঁদের দাবি, আগে গ্রামে গ্যাস–সংযোগ দিতে হবে। তা না হলে তাঁরা কাজ করতে দেবেন না।

এ ঘটনার পর জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা মৌলভীবাজার-৩ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নেছার আহমদ এবং মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) আসনের সাংসদ এম আবদুস শহীদের সঙ্গে দেখা করে সমস্যাটি তুলে ধরেন। বিষয়টি সুরাহার জন্য শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আকরাম খানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

কালাপুর ইউনিয়ন গ্যাস–সংযোগ বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মাওলানা মুজাহিদুল ইসলাম সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কালাপুর ইউনিয়নের মাটি, কালাপুরের গ্যাস। আগে কালাপুরের মানুষের হক। আমাদের না দিলে কাজ করতে দেওয়া হবে না।’

জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মৌলভীবাজারে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরবর্তী হবিগঞ্জের শাহজীবাজার থেকে সঞ্চালন লাইনে গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে। পাইপের ব্যাস ছয় ইঞ্চি। এই পাইপলাইন স্থাপনের সময় গ্রাহকের সংখ্যা কম ছিল। এখন গ্রাহকসংখ্যা কয়েক গুণ বেড়েছে। গ্যাসের এ সংকট সমাধানে কালাপুর গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস–সংযোগের এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ ২০২১ সালের জানুয়ারিতে রাজনগর থেকে মৌলভীবাজারে সাড়ে আট কিলোমিটার দীর্ঘ আরও একটি পাইপলাইন স্থাপনের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। কিন্তু সওজ বিভাগ থেকে রাস্তা কাটার অনুমতি না পাওয়ায় তা আর অগ্রসর হয়নি। এ লাইন হবে গ্রিডলাইন থেকে।

সওজ মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জিয়া উদ্দিন বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে রাস্তা কাটার অনুমোদন এলে জালালাবাদের সঙ্গে চুক্তি হবে।

জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড মৌলভীবাজার কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক এম আওলাদ হোসেন বলেন, স্থানীয়ভাবে বাধা দেওয়ায় কাজ বন্ধ। বাধা না দিলে ডিসেম্বরেই কাজ শেষ হয়ে যেত। এখন নতুন সংযোগ দেওয়ার সুযোগ নেই। সরকারি সিদ্ধান্তে আবাসিক সংযোগ দেওয়া বন্ধ আছে। রাজনগর থেকে আরেকটি লাইনেরও কার্যাদেশ দেওয়া আছে। অনুমোদন পেলে এক মাসের মধ্যে কাজ হয়ে যাবে।

 

Copyright © priyokagoj.com All Right Reserved.
Developed By Monoputo