সারা দেশে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) অনুমোদনহীন প্রায় ৪০ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে চিহ্নিত করেছিল মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ১৬ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট সঠিক বলে সুপারিশ করেছিল সংশ্লিষ্ট উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটি। ওইসব মুক্তিযোদ্ধার তথ্য-উপাত্ত অধিকতর যাচাই শেষে চূড়ান্তভাবে ১৪ হাজার ১৪১ জনের গেজেটকে বৈধতা দিতে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। শিগগিরই তা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জামুকার মহাপরিচালক (ডিজি) মো. জহুরুল ইসলাম রোহেল বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, ‘দেশের ৪৯২টি উপজেলায় জামুকার অনুমোদনহীন ৩৯ হাজার ৯৬১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে শনাক্ত করেছিল মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সরকারের নির্দেশে তাদের তথ্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা ও মহানগর কমিটি যাচাই-বাছাই করেছে। এরমধ্যে ৮টি উপজেলার প্রতিবেদন পাইনি। ৮০টি উপজেলার প্রতিবেদন আবারও যাচাই হবে-আমরা যেভাবে তথ্য চেয়েছিলাম সেভাবে তারা পাঠায়নি। বাকি উপজেলার ১৬ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেটকে সঠিক বলে সুপারিশ করেছিল যাচাই-বাছাই কমিটি। তথ্যগুলো জামুকার সদস্যদের নেতৃত্বে আরও অধিকতর যাচাই শেষে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজারের কিছু বেশি। তাদের গেজেট নিয়মিতকরণ করা হবে। অন্যসব উপজেলার প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
জানা গেছে, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন, ২০০২-এর ধারা ৭(ঝ) ব্যত্যয় ঘটিয়ে জামুকার সুপারিশ ছাড়া যাদের নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে ‘বেসামরিক গেজেটে’ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, এ ধরনের ৩৯ হাজার ৯৬১ জনের তথ্য পুনরায় যাচাই-বাছাইয়ের জন্য উপজেলা কমিটির কাছে পাঠানো হয়। ৩৯২টি উপজেলার প্রতিবেদন মার্চে অনুষ্ঠিত জামুকার ৭৩তম বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়-এসব উপজেলার কমবেশি ১৬ হাজার মুক্তিযোদ্ধার গেজেটের সঠিকতার প্রমাণ মিলেছে। সেইসব প্রতিবেদনের তথ্য জামুকার সদস্যদের নেতৃত্বে অধিকতর যাচাই-বাছাই করে সংশ্লিষ্ট গেজেটের বৈধতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেয় কমিটি। বাকি উপজেলা থেকে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই প্রতিবেদন নির্ধারিত সময়ে না পাঠানোয় ক্ষুব্ধ হয় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। কমিটির পক্ষ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। অতি জরুরি ভিত্তিতে সব জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে এই নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে জামুকা। এরপরও দেশের ৮টি উপজেলা থেকে প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। ৮০টি উপজেলার প্রতিবেদন যেভাবে তথ্য চাওয়া হয়েছিল সেভাবে তারা পাঠায়নি। ফলে সেই ৮৮টি উপজেলার প্রতিবেদন পুনঃযাচাই শেষে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। বাকি উপজেলার প্রতিবেদন অধিকতর যাচাই শেষে ১৪ হাজার ১৪১ জনকে বৈধতা দেওয়ার মতো যোগ্য বলে মনে করছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। শিগগিরই এসব বীর মুক্তিযোদ্ধার গেজেট নিয়মিতকরণের বিষয় মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (গেজেট) রথীন্দ্র নাথ দত্ত। তিনি যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে মন্ত্রণালয়। শিগগিরই বৈধদের নাম ও গেজেট মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা চূড়ান্ত না হলেও এ মুহূর্তে গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দুই লাখ ৩১ হাজার ৩৮৫ জন। এর মধ্যে ভাতা পাচ্ছেন এক লাখ ৮৭ হাজার ২৯৩ জন। মুজিববর্ষ উপলক্ষে ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক সম্মানী ভাতা ২০ হাজার টাকায় উন্নীত করার ঘোষণা দিলেও তা আগামী অর্থ বছর (২০২১-২০২২) থেকে কার্যকর হচ্ছে। বর্তমানে তাদের প্রত্যেককে মাসে ১২ হাজার টাকা করে সম্মানী ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারকে মাসিক ৩৫ হাজার টাকা, বীরউত্তমদের মাসিক ২৫ হাজার টাকা, বীরবিক্রমদের ২০ হাজার টাকা, বীরপ্রতীকদের মাসিক ১৫ হাজার টাকা হারে সম্মানী দেওয়া হচ্ছে। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার টাকা ও সর্বনিু ২৫ হাজার টাকা এবং শহিদ পরিবারকে ৩০ হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা হারে মহান বিজয় দিবস ভাতা এবং সব মুক্তিযোদ্ধার অনুকূলে মূল ভাতার ২০ ভাগ হারে বাংলা নববর্ষ ভাতা দেওয়া হচ্ছে।