পুলিশ সদস্যের লিঙ্গ কর্তনকারী স্ত্রী রুপসি দেওয়ান এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এইড ফর মেন ফাউন্ডেশন এর মানববন্ধন

এইড ফর মেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা জেলা এর উদ্যোগে পুরুষের প্রতি যৌন সহিংসতা বন্ধ করার লক্ষ্যে ও রাজশাহীতে এক পুলিশ সদস্যের লিঙ্গ কর্তনকারী স্ত্রী রুপসি দেওয়ান এর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করে এইড ফর মেন ফাউন্ডেশন। মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, এইড ফর মেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক খান, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের আইন বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী এডভোকেট কাউসার হোসাইন ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নাদিম।

লিখিত বক্তব্যে প্রধান অতিথি ও সংগঠনের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক খান বলেন, রাজশাহী মালোপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির এসআই ইফতেখার আল-আমিন এর পুরুষাঙ্গ কেটেছেন তার স্ত্রী। বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) এ ঘটনা ঘটে। ইফতেখার এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। একাধিক সুত্রের ভাষ্যমতে, বিকেলে এসআই ইফতেখার তার ভাড়া বাসায় ঘুমিয়ে ছিলেন। পারিবারিক কলহের জের ধরে এ সময় হঠাৎ-ই ইফতেখারের স্ত্রী রুপসী ধারালো অস্ত্র দিয়ে তার পুরুষাঙ্গ কেটে দেন। পরে স্থানীয়রা ইফতেখারকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ভর্তি করান। সেখান থেকে তাকে নেওয়া হয় হাসপাতালের ২ নম্বর ওয়ার্ডে। অবস্থার অবনতি হলে নেওয়া হয় অপারেশন থিয়েটারে। তিনি আরো বলেন, পত্রিকা থেকে পাওয়া তথ্য মতে বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ জানান, রুপসী দেওয়ান অভিযোগ স্বীকার করেছেন। বতর্মানে তিনি পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি এবং ভুক্তভোগী এসআই ইফতেখার আল-আমিন এর স্ত্রী রূপসীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।

লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের আইন বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী এডভোকেট কাউসার হোসাইন বলেন, “বর্তমানে বাংলাদেশে বিদ্যমান দন্ডবিধি-১৮৬০ এর ১৬ নং অধ্যায়ে মানবদেহ সংক্রান্ত অপরাধ বিষয়ে উল্লেখ করা আছে। উক্ত অধ্যায়ে পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলা নামে সুনির্দিষ্ট কোন অপরাধ আলাদাভাবে সংজ্ঞায়িত করা নেই। তবে উক্ত অধ্যায়ের ৩২০ ধারায় গুরুতর আঘাতের সংজ্ঞা দেওয়া আছে, যার মধ্যে পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলা অপরাধটি অন্তভুর্ক্ত করা যায়। ৩২০ ধারায় উল্লেখিত গুরুতর আঘাতের সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায় যে, আট শ্রেনীর আঘাতকে গুরুতর আঘাত হিসেবে গন্য হবে। উক্ত আট শ্রেনীর আঘাতের মধ্যে ১, ৪ ও ৫ নং শ্রেনীর আঘাতের সবগুলো বা যে কোন এক শ্রেণীর আঘাত পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলাকে অন্তর্ভুক্ত করে বিধায় দন্ডবিধির ৩২০ ধারার সংজ্ঞা অনুযায়ী পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলার অপরাধ একটি মারাত্মক আঘাতের অপরাধ। উক্ত মারাত্মক আঘাতের শাস্তি ৩২৫ ও ৩২৬ ধারায় দেওয়া আছে। ৩২৫ ধারা প্রযোজ্য হবে; যদি মারাত্মক আঘাতের জন্য কোন অস্ত্র ব্যবহার না করা হয় বা সাধারন (ভোতা) অস্ত্র ব্যবহার করা হয়, উক্ত ধারা অনুযায়ী অপরাধীর শাস্তি ৭ বৎসর কারাদন্ড এবং জরিমানা হতে পারে। অন্যদিকে ৩২৬ ধারা প্রযোজ্য হবে যদি মারাত্মক আঘাত সংঘটনের জন্য মারাত্মক বা বিপদজনক অস্ত্র বা মাধ্যম ব্যবহার করা হয়। উক্ত ধারা অনুযায়ী অপরাধীর শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা যে কোন বর্ননার কারাদন্ড যা দশ বছর পর্যন্ত হতে পারে এবং জরিমানা হতে পারে। উক্ত বিশ্লেষণ থেকে এটি স্পষ্ট যে মারাত্মক অস্ত্র বা মাধ্যম ব্যবহার করে পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলা (মারাত্মক আঘাত) এর অপরাধ করা হলে তার শাস্তি হতে পারে যাবজ্জীবন কারাদন্ড বা যে কোন বর্ননার কারাদন্ড যা দশবছর পর্যন্ত হতে পারে এবং জরিমানা। কিন্তু বর্তমানে বিদ্যমান শাস্তি বলবৎ থাকার পরেও এই অপরাধটি সংঘটিত হওয়ার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় এবং এটি একটি নিষ্ঠুরতম অমানবিক অপরাধ যা একজন পুরুষকে জীবিত অবস্থায় মৃতের মত করে বাঁচিয়ে রেখে অসহনীয় মানসিক হতাশা ও যন্ত্রনা দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় এবং সমাজে এর মারাত্মক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়ে বিধায় এই অপরাধটিকে আলাদাভাবে সংজ্ঞায়িত করে শাস্তির মাত্রা বাড়িয়ে অপরাধীদের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করলে এ জাতীয় অপরাধ কমবে এবং ভিকটিম ন্যায় বিচার পাবে বলে আমি মনে করি।”

এইড ফর মেন ফাউন্ডেশন এর সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নাদিম বলেন, "পুরুষাঙ্গ-কর্তনকে ধর্ষণতুল্য অপরাধ বা ধর্ষণের চেয়েও গুরুতর অপরাধ ও যৌন সহিংসতা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। কারণ একজন ধর্ষনের শিকার নারী চাইলে পুনরায় বিয়ে করতে পারেন, সন্তান জন্ম দিতে পারেন, ও যৌন জীবনে সক্রিয় থাকতে পারেন । কিন্তু লিঙ্গ-কর্তনের শিকার একজন পুরুষ জীবনে আর বিয়ে করতে পারেন না, যৌন জীবনে সক্রিয় থাকতে পারেন না, সন্তান জন্ম দিতে পারেন না। মৃত্যু ঝুঁকি এড়িয়ে বেঁচে গেলেও লিঙ্গ-কর্তনের শিকার পুরুষকে আজীবন অপূরণীয় ক্ষতি নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়, যা খুবই অমানবিক। সুতরাং ধর্ষণের চেয়ে লিঙ্গ-কর্তন ও পুরুষত্বহানি কোনও অংশেই কম গুরুতর অপরাধ নয়। তাই ধর্ষণের শাস্তি যেমন মৃত্যুদন্ড, তেমনই পুরুষাঙ্গ-কর্তনের শাস্তি হিসেবেও মৃত্যুদন্ডের বিধান থাকা আবশ্যক।"

ঢাকা জেলার আহ্বায়ক হাদিউজ্জামান পলক এর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র খালিদ মাহমুদ তন্ময়, ঢাকা জেলার যুগ্ন-আহবায়ক রহমান নূর, যুগ্ম আহবায়ক আলমগীর হোসেন, পুরুষ আন্দোলন নেতা মো: জসীম উদ্দীন, মুনতেশাম সহ প্রমুখ।

ঢাকা জেলার আহ্বায়ক হাদিউজ্জামান পলক তার বক্তব্যে বলেন, “ এসআই ইফতেখার এখন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। চিকিৎসকরা তার অস্ত্রপাচার করার পরেও তার বিশেষ অঙ্গটি প্রতিস্থাপনে সফল হন নি। তার মানে তিনি সারাজীবন এই পুরুষত্বহীনতা নিয়ে বেঁচে থাকবেন। প্রতি মাসেই দেশে অন্তত ১৫-২০ টি লিঙ্গ কর্তনের খবর বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় আসে, যা সত্যিই উদ্বেগজনক। পুরুষের প্রতি এরকম নৃশংসতার সুষ্ঠু বিচার যদি এখনই না করা যায়, তাহলে আগামী বছরগুলোতে এই সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে জোর দাবী জানাচ্ছি, লিঙ্গ কর্তনের শাস্তি মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হোক”

ঢাকা জেলার যুগ্ম আহবায়ক রহমান নূর বলেন, “ইদানীং একটা প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, সামান্য কারণে বা ব্যক্তিগত কলহের জের ধরে পুরুষকে নৃশংসভাবে সারাজীবন এর জন্য লৈঙ্গিকভাবে বিকলাঙ্গ করে দেয়া হচ্ছে। যার সর্বোচ্চ শাস্তি মাত্র ৭ বছর। অথচ ভিক্টিম পুরুষটি ভুগবে সারাজীবন। এটা ন্যায়বিচার হল কি? একটি বিশেষ মহল থেকে, প্রতিনিয়ত উস্কানি দেয়া হচ্ছে পুরুষকে চিরদিনের মতো লৈঙ্গিকভাবে বিকলাঙ্গকরণে এবং বিকলাঙ্গকরণকে গ্রহণযোগ্য করার জন্য বিকলাঙ্গ করার পরে ভিক্টিম পুরুষকেই পরকীয়া করার মিথ্যা অভিযোগে রঞ্জিত করা হচ্ছে। এটি একটি সুদুরপ্রসারী চক্রান্তেরই অংশ মাত্র! এখনই আইনি পরিমার্জন বা সরকার শক্ত অবস্থান না নিলে ভবিষ্যৎ এ আরও পুরুষ এই নৃশংসতার শিকার হবে। সমাজে অপরাধ আর অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে।

Copyright © priyokagoj.com All Right Reserved.
Developed By Monoputo