বিপদের আশঙ্কা, সংক্রমণ বাড়ছে জেনেও স্বাস্থ্যবিধি মানছে না

দেশে করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। প্রতিদিন শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা ৭৫০ ছাড়িয়েছে; নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে দৈনিক শনাক্তের হার আবার পৌঁছে গেছে ৪ শতাংশের কাছাকাছি। আক্রান্তের সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুও। সংক্রমণ বাড়ছে জেনেও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না অনেকে।

মাস্ক ছাড়াই অফিস, আদালত, বাজার, গণপরিবহনে চলাফেরা ও জনসমাবেশ করছে মানুষ। সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই নেই। এভাবে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করা হলে সামনে বড় বিপদের আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা। তারা বলেন, করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন দ্রুত ছড়ায়। উপসর্গও মৃদু (হালকা সর্দি-কাশি ও জ্বর)। তাই স্বাস্থ্যবিধি না মানলে দেশের অনেক মানুষ সংক্রমিত হবে। কোনো পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে পুরো পরিবার এবং এক পরিবার থেকে আরেক পরিবার দ্রুত ছড়াবে। তাই কারো মৃদু উপসর্গ দেখা দিলে কোভিড পরীক্ষার প্রয়োজন নেই; চার থেকে সাত দিন আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন আমেরিকার শীর্ষ সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যান্থনি ফাউসি।

কোভিড-১৯-সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের পাশাপাশি ডেলটা ভ্যারিয়েন্টও আছে দেশে। ওমিক্রন দ্রুত ছড়ায়। কোনো পরিবারের একজন আক্রান্ত ব্যক্তি দ্রুত পরিবারের সব সদস্যকে সংক্রমিত করে। এজন্য আমরা স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে বারবার সতর্ক করে আসছি। কিন্তু দেশের অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানছে না, মাস্ক পরছে না। খামখেয়ালিপনা করছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে সামনে বড় বিপদ অপেক্ষা করছে। আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যেতে পারে সংক্রমণ। আর সংক্রমণ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে। তাই সবার মাস্ক পরতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, সভা-সমাবেশসহ জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তিনি বলেন, আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি বৈঠক করে সার্বিক বিষয়ের একটি প্রস্তাবনা সরকারকে দেবে।

দুই ছেলেসহ করোনা আক্রান্ত প্রতিমন্ত্রী পলকদুই ছেলেসহ করোনা আক্রান্ত প্রতিমন্ত্রী পলক
বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যানেসথেসিওলজিস্টের সভাপতি অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বণিক বলেন, দেশে করোনা রোগী এখন বাড়ছে। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের বিপজ্জনক দিক হলো, উপসর্গ মৃদু। এ কারণে কেউ ওমিক্রনে সংক্রমিত হওয়ার পর বুঝে ওঠার আগেই অনেককে সংক্রমিত করে। অর্থাত্ নীরবে ছড়িয়ে পড়ে ওমিক্রন। দ্রুত পরিবার টু পরিবার সংক্রমিত করে। যারা বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত, তারা ওমিক্রনে সংক্রমিত হলে সমস্যা বেশি হয়। তাই সতর্ক থাকতে হবে। সবার মাস্ক পরতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল হক বলেন, দেশে করোনা এখন ঊর্ধ্বমুখী। এখন সবাইকে মাস্ক পরতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। সভা-সেমিনারসহ জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নইলে সামনে বড় বিপদ। তিনি বলেন, মাস্ক পরেই সবকিছু করা সম্ভব। করোনার যে ভ্যারিয়েন্টই আসুক না কেন, মাস্ক পরলেই নিরাপদে থাকা যায়। এ ব্যাপারে জনসাধারণের সচেতন হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৭৭৫ জনের মধ্যে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে ছয় জনের। এর চেয়ে বেশি রোগী এক দিনে শনাক্ত হয়েছিল সর্বশেষ ৪ অক্টোবর, সেদিন ৭৯৪ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ার খবর এসেছিল। নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৮৭ হাজার ৯১৫ জনে। এ পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৮ হাজার ৮৭ জন।

Copyright © priyokagoj.com All Right Reserved.
Developed By Monoputo