ফরিদপুরের মাঠে মাঠে চাষীরা ব্যস্ত পিয়াজ আবাদে

ঘূর্ণঝড় জাওয়াদের কারণে ফরিদপুরের কৃষকদের প্রধান অর্থকরী ফসল পিয়াজ খেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অনেকেই দিশাহারা হয়ে পড়েছিলেন। ফলে জেলার বিভিন্ন স্থানে পিয়াজ চাষীরা ফের পিয়াজ আবাদ নিয়ে বেশ শংকার মধ্যে ছিলেন। কিন্তু চাষীরা সেই শংকা সরিয়ে দিয়ে নতুন করে ফের নেমে পড়েন পিয়াজ আবাদে। জেলার পিয়াজ নামকরা হওয়ায় এবং বাজার মূল্য অনেক বেশী থাকায় নতুন উদ্যোমে খেতে নেমে পড়েন চাষীরা। পিয়াজ নিয়ে তাই নানা প্রত্যাশার কথা জানালেন ভাঙ্গার আলগী ইউনিয়নের বালিয়া গ্রামের নাননু মিয়া।

তিনি বলেন, প্রতি বছর তিনি নিজের ৬ বিঘা জমিতে পিয়াজের আবাদ করে থাকেন। তাতে তিনি তার সংসার ভালো ভাবেই চালাতে পারেন। হামিরদী ইউনিয়নের মুনসুরাবাদ গ্রামের আমিনুল ইসলাম জানান, তিনি ৪ বিঘা জমিতে পিয়াজ আবাদ করেন। এবার পানিতে পিয়াজ খেত নষ্ট হয়ে যায়। একবার মনে করেছিলেন আর পিয়াজ লাগাবেন না। কিন্তু পরক্ষনের মত পাল্টে গোটা জমিতেই পিয়াজের আবাদ করেছেন। বর্তমানে ফরিদপুর জেলার বিশেষ করে ভাঙ্গা, নগরকান্দা, সালথা, ফরিদপুর সদর ইউনিয়নের দিগন্ত জোড়া মাঠে চলছে নতুন করে পিয়াজের আবাদ। 

ভাঙ্গা উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মাঠের পরে মাঠে শীত মৌসুমের সকাল বেলায় শরীরে শীতের চাদর, মাথায়  মাফলার, হাতে কাঁচি-কোদাল নিয়ে দলবদ্ধভাবে পিঁয়াজ চাষাবাদ করতে জমিতে নেমে পড়েছেন জমির মালিকসহ কৃষকেরা। ভাঙ্গা উপজেলার মধ্যে ঘারুয়া, আলগী, চান্দ্রা, তুজারপুর, কালামৃধা, নাসিরাবাদ, মানিকদাহ, হামিরদী, চুমুরদী, আজিমনগর, কাউলীবেড়া ও নুরুল্যাগঞ্জ ইউনিয়নসহ ভাঙ্গা পৌর সদর এলাকায় প্রতিবছরের মত বেশ জোরেশোরে শুরু হয়েছে পিঁয়াজের আবাদ। ভাঙ্গা উপজেলায় মোট আবাদি জমির প্রায় ৯০ শতাংশ জমিতে পিঁয়াজের আবাদ করা হয়ে থাকে। এখন জমিতে পুরোদমে হালি পিঁয়াজ, কদম পিঁয়াজ, মুরিকাটা পিয়াজ রোপণের ধুম পড়ে গেছে। 

পিয়াজ আবাদকারী কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে ঘুর্ণিঝড় জাওয়াদ এর কারনে প্রায় ৪ হাজার হেক্টর বীজতলা আংশিক বিনষ্ট হয়। এতে করে পিয়াজ চাষাবাদ কাজে সম্পৃক্ত পরিবারগুলো চরমভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পরে। একই সাথে তারা নতুন করে বীজতলা উৎপাদনেও বেশ নিরাশার মাঝে দোদুল্যমান হয়ে উঠে। কিন্তু বেশীর ভাগ কৃষক পরিবার পিয়াজ চাষাবাদ কাজে জড়িত হয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। ফলে তারা নতুন আশায় ফের বীজতলার কাজ শুরু করার পাপাশাশি পিয়াজের বাম্পার ফলনের লক্ষে মাঠে কাজ শুরু করেছেন। 
ভাঙ্গা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৫৯০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পিয়াজ এবং ৪৩৫ হেক্টর জমিতে দানা পিয়াজের আবাদ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ১৫ দিনে এর আবাদ আরও বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া ২৫০০ হেক্টর জমিতে হালি পিয়াজ এর চাষাবাদ করেছে ভাঙ্গায় পিয়াজ চাষীরা।

ভাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুদর্শন শিকদার জানান, জাওয়াদের প্রভাবে ভাঙ্গায় পিয়াজের বীজতলার আংশিক ক্ষতি সাধিত হলেও চলতি মৌসুমে পিয়াজ উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের ২৩ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কৃষকের পাশে থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। তাছাড়া পিয়াজ চাষের ক্ষেত্রে পাতা পরা রোগ বিষয়ে সজাগ থেকে কৃষকদের নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

Copyright © priyokagoj.com All Right Reserved.
Developed By Monoputo