রাজশাহীতে ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। এলাকায় করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ প্রায় আকাশ ছুতে বসেছে।
শনিবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চারজনের মৃত্যু হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার রাজশাহীর ৪১৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৩৩৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। নমুনার তুলনায় শনাক্তের হার ৭৮ দশমিক ৬৬ ভাগ।
২০২০ সালের ১২ এপ্রিল রাজশাহীতে প্রথম করোনা শনাক্তের পর সর্বোচ্চ এই হার।
রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের মধ্যে রাজশাহীতে করোনার সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি। দ্রুত প্রশাসনিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিধি পরিপালনের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে।
জানা যায়, শুক্রবার রাজশাহীস্থ ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনের ২৪ কর্মকর্তা কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সহকারী হাইকমিশনার সঞ্জীব কুমার ভাটিও করোনাক্রান্ত হয়ে রাজশাহীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। একই সময়ে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর হাবিবুর রহমানও সস্ত্রীক করোনাক্রান্ত হয়েছেন।
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক বলেছেন, রাজশাহীতে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। প্রশাসনকে দ্রুত সময়ে স্বাস্থ্যবিধি কার্যকরে পদক্ষেপ নিতে সুপারিশ করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে রাজশাহী মহানগরীতে বিধিনিষেধ কার্যকর হচ্ছে।
এদিকে রাজশাহীতে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী হতে থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। তারই ধারাবাহিকতায় শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে বাইরে জন ও যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও জনসমাগম রোধে দোকানপাট ও কমিউনিটি সেন্টার পুরোপুরি বন্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শুক্রবার রাতে ও শনিবার দিনভর মাইকিং করে সেটি জানিয়ে দেয়া হয়েছে নগরবাসীকে। শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে তা কার্যক্রর হবে বলে জানিয়েছেন রাজশাহীর জেলা প্রশাসন। এ নিয়ে শনিবার দুপুরে বিধি নিষেধ সংক্রান্ত একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও প্রচার করেছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন।
রাজশাহীতে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বিধি নিশেধ আরোপ কার্যকর করার জন্য বিবিধ প্রশাসনিক উদ্যোগ নেওয়ার কথা গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করলে জেলা প্রশাসন সংক্রমণ ব্যাধি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও জানানো হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল যুগান্তরকে বলেন, গত কয়েকদিন থেকে রাজশাহীতে সংক্রমণের হার ৬০ শতাংশের ওপরে চলে গেছে। শুক্রবার এই হার ছিল ৭৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
এর আগের দিন বৃহস্পতিবার সংক্রমণের হার ছিল ৭৫ শতাংশ। সংক্রমণের হারের কারণে রাজশাহী জেলা দেশের মধ্যে করোনার রেড জোনে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে করোনা নিয়ন্ত্রণে আনতে জনগণকে অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে যেতে নিরুৎসাহিত করতে জেলার করোনা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা কমিটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
এদিকে শুক্রবার রাতে ও শনিবার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মাইকিং করা হয়েছে রাজশাহী নগরীতে। এতে বলা হয় করোনা সংক্রমণ রোধে শনিবার থেকে সন্ধ্যার পর দোকানপাট, শপিংমল ও কমিউনিটি সেন্টার বন্ধ রাখতে হবে। একই সঙ্গে অপ্রয়োজনে বাড়ির বাইরে যেতেও নিরুৎসাহিত করা হয়।
জনস্বার্থে এই সংক্রান্ত আদেশ সবাইকে মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে বলা হচ্ছে- কেউ এসব বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করলে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের এই সরকারি সংক্রান্ত নির্দেশনা কার্যকর করতে আরএমপির পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট থানা ও ফাঁড়িগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল আরও জানান, রাজশাহী জেলায় করোনা সংক্রমণ বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কারও একার পক্ষে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এই মুহূর্তে জনগণের মধ্যে জনসচেতনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শনিবার থেকে সন্ধ্যার পর থেকে বিশেষ করে ৮টার পর দোকানপাট, বিপণিবিতান, শপিংমল ও কমিউনিটি সেন্টার বন্ধ রাখার জন্য গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও প্রচার করা হয়েছে। আশা করি সবাই এই নির্দেশনা মেনে চলবেন।
গণবিজ্ঞপ্তিতে রাজশাহীর বিনোদন কেন্দ্র ছাড়াও হাটবাজার গুলোর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রয়োজন হলে সেগুলোতেও বিধিনিষেধ আরোপ করে তা কার্যকর করা হবে।