নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে কিছু কথা, কষ্ট ছাড়া কি কেষ্ট মেলে

বলছিলাম শিক্ষা কারিকুলাম পরিবর্তন নিয়ে। দশম শ্রেণির আগে সব পরীক্ষা তুলে দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার তাগিদ না থাকলে বাচ্চারা পড়বেই কেন, কষ্ট করে পাস না করতে পারলে দুর্বলতাও ধরতে পারবে না।

কোন বিষয়ে দুর্বল, সেটা না বুঝতে পারলে কীভাবে চেষ্টা করে উন্নতি করার? পৃথিবী প্রতিযোগিতার জায়গা। নতুন প্রজন্মকে চেষ্টা করে পৃথিবীতে নিজের জায়গা করে নিতে হবে। আর্টিফিশিয়াল সুন্দর শৈশব–কৈশোর বানিয়ে ভবিষ্যৎ ঝরঝরা করে কী লাভ হবে?

একদিন আমার মেয়ে কাঁদতে কাঁদতে স্কুল থেকে এসেছিল। তার বান্ধবীর একটা মাত্র জিনসের প্যান্ট। আমি তাকে কিছু কিনে দিতে পারি? ব্যাপারটা নিয়ে অনেক ভাবলাম। তারপর স্কুলে গিয়ে ওর শিক্ষকের সঙ্গে  আলাপ করলাম। তখন ডিসেম্বর মাস, ক্রিসমাসের আগে আগে নাম গোপন করে কিছু জিনিস বাচ্চাটাকে দেওয়া গিয়েছিল।

সে জানতে পারেনি কে দিয়েছে, তার সম্মান নষ্ট হয়নি। খুব ভালো ছাত্রী বাচ্চাটা। প্রতিটি পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে নামী কলেজে পুরোপুরি স্কলারশিপ পেয়ে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির শেষ বর্ষে পড়ছে সে। পাস করে চাকরি নিয়ে জীবন গোছাবে। মেয়ের সঙ্গে সেদিনও বাসায় এসেছিল, পারিবারিক দারিদ্র্য তার পথে বাধা হয়নি। কারণ, শিক্ষাটা শুরু হয়েছে শৈশবে।

একটি শিশু অসীম ক্ষমতা নিয়ে পৃথিবীতে জন্মে। শিক্ষাব্যবস্থার কাজ তার সেই ক্ষমতা শিখিয়ে চ্যালেঞ্জ করে ক্ষমতা বাড়িয়ে তাকে পৃথিবীর জন্য উপযুক্ত করে তোলা। এ দেশে কিছু কোর্স আছে মিডল স্কুলে, যেখানে এক্সট্রা অঙ্ক ও বিজ্ঞান শেখানো হয়, যেসব বাচ্চা তাদের পরিবার থেকে প্রথম কলেজে যাচ্ছে তাদের জন্য। এতে বাচ্চাদের ভবিষ্যতের প্রস্তুতি যথেষ্ট হয়।

আমার ছেলের এক বন্ধু এমডি পিএইচডি কোর্সে যাচ্ছে এ বছর, সেই কোর্স সে–ও নিয়েছে। একাডেমিকস এক নম্বর এখানে। ভালো জিপিএ না থাকলে বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে এ দেশে আবেদন করার সুযোগ থাকে না। ঘর গোছানো বা রান্না করা বাচ্চারা বাসাতেই শেখে। সেসবের জন্য স্কুল কেন? বরং শরীরচর্চা ও সুষম খাবারের শিক্ষাটা স্কুল থেকে বাচ্চারা পায়।

বাচ্চাদের মারধর করা আমাদের দেশের একটা মারাত্মক বদভ্যাস, সেটা মা–বাবাই হোন, অথবা শিক্ষক। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। বাচ্চারা মা–বাবা বা শিক্ষকদের কাছে মেহমান। থাকে খুব অল্প সময়ের জন্য। গায়ে হাত তোলা বন্ধ হোক এখন, কাল নয়। এই যে অকৃতকার্য হওয়া শিশু আত্মহত্যা করে চলে গেল, মা–বাবা আর কি তাকে ফিরে পাবেন?

নিজের হাত–পা নিজের কাছে রাখতে শিখুন। আর জীবন একটা ম্যারাথন, একটা পরীক্ষায় ভালো করলেই মিষ্টি নিয়ে দৌড়ানোর কিছু নেই। আপনার শিশু আজকে ভালো করছে, তার ভবিষ্যৎ সফলতা একটা পরীক্ষার ওপর নির্ভর করে না। আরেক বাচ্চার বাসায় মিষ্টি বিতরণ করে কী লাভ? প্রতিযোগিতা হতে হবে স্বাস্থ্যকর, যাতে অন্য সবাই ভালো করতে উত্সাহিত হয়।

সব কাজের প্রতি সম্মান জানানো এখন পৃথিবীর দাবি। কেউ সৎ পথে রিকশা চালিয়ে যদি ভালো থাকেন, আমার সম্মান করতে বাধা কোথায়? আর মানসিক স্বাস্থ্য ও কোপিং টুলস শিক্ষা দেওয়া এখন সময়ের দাবি। খারাপ সময় জীবনে আসবেই, ভালো সময়ের মতোই এটাও স্থায়ী নয়। খারাপ সময়টুকু কীভাবে পার করতে হবে, এটুকু শিক্ষা বাচ্চাদের দরকার।

শিশুরাই ভবিষ্যতের দেশচালক। এদের গড়ে না তুলতে পারলে এটা আমাদেরই ব্যর্থতা।

Copyright © priyokagoj.com All Right Reserved.
Developed By Monoputo