শরীরে ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে গেলে যে ক্ষতি

পায়ের গোড়ালিতে ব্যথা কিংবা অস্থিসন্ধি ফুলে গিয়ে তীব্র যন্ত্রণা বা গাঁটে গাঁটে ব্যথা— এই ধরনের শারীরিক অসুস্থতা রোজের জীবনে লেগেই থাকে। কর্মব্যস্ত জীবন এবং পরিবর্তিত খাদ্যাভ্যাস যে সব অসুখকে আরও বড় আকারে ডেকে আনছে, তার মধ্যে অন্যতম রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া।

আমাদের শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের স্বাভাবিক মাত্রা হচ্ছে পুরুষদের জন্য ৩ দশমিক ৪ থেকে ৭ মিলিগ্রাম/ডিএল এবং মেয়েদের জন্য ২ দশমিক ৪ থেকে ৫ দশমিক ৭ মিলিগ্রাম/ডিএল। এই মাত্রা অতিক্রম করলে তাকে হাইপার ইউরিসেমিয়া বলা হয়।

বয়োজ্যেষ্ঠ ও কিডনি রোগীদের মধ্যে ইউরিক অ্যাসিড বাড়ার প্রবণতা বেশি। কিন্তু আজকাল কম বয়সীদের মধ্যেও এই অ্যাসিড বাড়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ স্থূলতা ও অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস।

কী খাওয়া যেতে পারে

● প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে মিঠা পানির মাছ ও চামড়া ছাড়া মুরগির মাংস, ডিম, মুগডাল, টক দই, দুধ খেতে হবে পরিমিত পরিমাণে।

● লালশাক, ডাঁটাশাক, লাউশাক, কলমিশাক, কুমড়া শাক, সবুজ শাক।কাঁকরোল, পেঁপে, ধুন্দুল, চিচিঙ্গা, পটোল, করলা, লাউ, চালকুমড়া ইত্যাদি।

একই সঙ্গে সব ধরনের মৌসুমি ফল খেতে হবেপর্যাপ্ত পরিমাণে। পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।

 বাড়তে পারে যেসব কারণে

● ইউরিক অ্যাসিড বিপাকের এনজাইমে ঘাটতি থাকলে। ওজন বেশি হলে। অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস।

● আমিষজাতীয় ও পিউরিনসমৃদ্ধ খাবার বেশি খেলে। কিডনি পর্যাপ্ত ইউরিক অ্যাসিড শরীর থেকে নিষ্কাশন করতে না পারলে।

● বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়।

● ধূমপান বা কোনো নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ। 

যেসব খাবারে বাড়তে পারে

● অতিরিক্ত লবণযুক্ত (প্যাকেটজাত খাবার), চর্বিযুক্ত তেলে ভাজা খাবার, ইস্ট বা ইস্টমিশ্রিত খাবার।

● মসুর, মাষকলাই ও বুটের ডাল; বাদাম, শিমের বিচি, কাঁঠালের বিচি, মটরশুঁটি।

● শতমূলী, পুঁইশাক, পালংশাক, সরিষার শাক, মুলাশাক, পাটশাক, কচুরশাক, কচুরলতি।

● ক্রুসিফেরি গোত্রের উদ্ভিদ—মুলা, ঢ্যাঁড়স, ওলকপি, টমেটো, ব্রকলি,বাঁধাকপি, ফুলকপি, শজনে, বেগুন।

● কলিজা, মগজ, মাছের ডিম, সামুদ্রিক মাছ, গরু-খাসির মাংস, হাঁস বা ভেড়ার মাংস, ফুসফুস, মাশরুম, হাঁস-মুরগির চামড়া, কাঁকড়া, সামুদ্রিক শুঁটকি, ইলিশ মাছ, মাংসের স্যুপ।

বেড়ে গেলে ক্ষতি

শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে গেলে গেঁটে বাত বা গিরায় ব্যথা, উচ্চরক্তচাপ, কিডনি অকেজো হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়। 

কি করা যেতে পারে

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ইউরিক অ্যাসিড কমাতে ওষুধের দরকার হয় না। তবে সন্ধি ফুলে লাল হয়ে গেলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ইউরিক অ্যাসিড একটি নির্দিষ্ট মাত্রার বেশি থাকলে, কিডনি রোগ হলে চিকিৎসক ওষুধ দেবেন। পাশাপাশি একজন বিশেষজ্ঞ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে খাদ্যাভ্যাস গড়তে হবে। 


মো. ইকবাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল

 

Copyright © priyokagoj.com All Right Reserved.
Developed By Monoputo