করোনাকালে ঠান্ডা জ্বর হলে কি করবেন- পুষ্টিবিদ আছিয়া পারভীন আলি শম্পা

"করোনা ভাইরাসের" কারণে বর্তমানে সামান্য ঠান্ডা লাগলেই আমরা আতকে উঠছি। করোনা আতংকে আমরা এতটাই প্যানিক হয়ে পড়েছি যে, ভেবে নিচ্ছি ঠান্ডা লেগেছে মানেই হল আমি করোনা পজিটিভ।ব্যাপারটা যে সব সময় এমন হবে তা নয়।

বর্তমানে অবস্থায় অনেকেই সাধারন ঠান্ডা, সর্দি-জ্বর বা সর্দি-কাশি তে ভুগতে পারেন, যা সাধারণ ফ্লু বলে গণ্য। তাই সর্দি-জ্বর হলেই সাথে সাথে হাসপাতাল বা ডাক্তারের কাছে যাবার দরকার নেই। বর্তমান সময়টাতে এমনিতেই সবাই প্যানিক গ্রস্ত। এমন অবস্থায় আপনি হাসপাতাল বা ডাক্তারের কাছে যেখানেই যান না কেন, অবহেলা বা নানারকম হয়রানির শিকার হতে পারেন।

এরকম অবস্থায় আমাদের উচিত বাড়তি সতর্ক হওয়া,

করোনার সাথে সাধারণ ফ্লুর পার্থক্য জেনে নেয়া।নিজেকে পরিস্কার পরিছন্ন রাখা,পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে নিজেকে কিছুটা আলাদা রাখা। সেই সাথে আমাদের বিগত কয়েকদিনের কার্যক্রম পর্যালোচনা করা।

যেমনঃ ঠান্ডা বা সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হবার কিছু দিন পূর্বে আমরা অনেক ক্ষন রোদ কিংবা ঘাম অবস্থায় ছিলাম কি না, অনেকক্ষণ ভেজা অবস্থায় কাপড় ধোঁয়া বা গোসল করেছি কি না, ঠান্ডা লাগতে পারে এমন কোন হেয়ার প্যাক চুলে লাগিয়েছি কি না অথবা ঘরের ধূলা-বালি পরিস্কার করেছি কি না, এই বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করা উচিত। এর সাথে সম্প্রতি পরিবারের কোন সদস্য ঠান্ডা বা সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন কি না, বাইরে থেকে কোন নতুন সদস্য বেড়াতে এসেছেন কি না অথবা আপনি সম্প্রতি গণপরিবহন ব্যবহার করেছেন কি না একটু ভেবে দেখুন।

চায়নার কোভিড-১৯ রোগীদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দেখা গেছে যে, যারা করোনাতে আক্রান্ত হয়েছেলেন তাদের প্রধান লক্ষ্মণগুলোর মধ্য ছিল-

জ্বর (৮৮%) রোগীদের ক্ষেত্রে

কফ (৬৮%) রোগীদের ক্ষেত্রে

ক্লান্তি (৩৮%) রোগীদের ক্ষেত্রে

শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট বা নিঃশ্বাসের দুর্বলতা ছিল (১৯%) রোগীর ক্ষেত্রে।

পাশাপাশি অনেকেরই ঠান্ডা, গলা ব্যথা, ডায়রিয়া বা বমির অভিজ্ঞতা হয়েছিল।

এরপর যদি করোনা সন্দেহ হয় তবে ঘরে অবস্থান করেই EDCR এর হট লাইনে ফোন করুন। যদিও এ সময়ে তাদের সার্ভিস নিয়ে মানুষ বেশ বিরক্ত। এই মূহুর্তে আপনি যদি নিজেই হাস্পাতালে যান তবে এর চেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হবেন। কারণ, অধিকাংশ হাসপাতালে পিপিই না থাকার কারণে এই সমস্যা শুরু হয়েছে।

এর বাইরে আপনি যা করতে পারেন তা হল, ঘরে অবস্থান করে সূপ জাতীয় গরম খাবার, গরম পানি, কিছু সময় পর পর আদা চা, তুলসি চা কিংবা মসলা চা খেতে পারেন। পাশাপাশি নিজের পরিস্কার পরিছন্নতার দিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিন। কিছুক্ষন পর পর হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলা, প্রতিদিন জীবাণু মুক্ত সাবান দিয়ে গোসল করা, একটি নির্দিষ্ট রুমে অবস্থান করা।প্রতিদিন নিজের কাপড় জমিয়ে না রেখে গোসলের সময় নিজেই সাবান দিয়ে নিজের কাপড় ধুয়ে ফেলুন।এতে করে পরিবারের অন্য সদস্যরা নিরাপদ থাকবেন।

এসময় বিশেষজ্ঞ কারো পরামর্শ ব্যতিরেকে কোন এন্টিবায়োটিক নেবেন না। তবে হাতের কাছে স্টেরয়েড ইনহেলার রাখতে পারেন। যাদের করোনার কারণে শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এটি বেশ কাজে দিয়েছে।

পরিশেষে বলব আমাদেরকে বর্তমানে পরিস্থিতিতে মানসিক ভাবে শক্ত থাকতে হবে। যেমনটা নিজের এবং নিজের পরিবারের কথা ভাবতে হবে তেমনি অন্য সবার কথা ও চিন্তা করতে হবে।

 

লিখেছেনঃ-

আছিয়া পারভীন আলী শম্পা

পুষ্টিবিদ।

Copyright © priyokagoj.com All Right Reserved.
Developed By Monoputo