সাতক্ষীরায় শনিবার থেকে সাত দিনের লকডাউন

করোনা সংক্রমণের হার ভয়াবহভাবে বেড়ে যাওয়ায় অবশেষে সাতক্ষীরা জেলায় লকডাউন ঘোষণা করা করেছে। আগামী শনিবার সকাল ছয়টা থেকে এ লকডাউন কার্যকর করা হবে। প্রাথমিকভাবে এ লকডাউন এক সপ্তাহ (৫ থেকে ১১ জুন পর্যন্ত) চলবে। প্রয়োজনে সময় বাড়ানো হতে পারে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে দুপুর সাড়ে ১২টায় ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল। সভায় উপস্থিত ছিলেন ৩৩ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আল মাহমুদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, সিভিল সার্জন হুসাইন সাফায়াত, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক কুদরত-ই-খোদা, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি মমতাজ আহমেদ প্রমুখ।

গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্তের হার ৫৩ দশমিক ১৯ শতাংশ
সভায় বলা হয়, সাতক্ষীরা জেলায় গতকাল বুধবার থেকে আজ বৃহস্পতিবার ২৪ ঘণ্টায় ৯৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৫০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। করোনা সংক্রমণের হার ৫৩ দশমিক ১৯ ভাগ। অথচ মে মাসের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহে এ হার ছিল ১২-১৩ শতাংশ। মে মাসের শেষ সপ্তাহ এ হার ছিল ৪১ শতাংশ। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩ দশমিক ১৯ শতাংশে।

সভায় আরও বলা হয়, জেলার মানুষ সচেতন হচ্ছে না। অধিকাংশ মানুষ মাস্ক ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলে না। ভ্রাম্যমাণ আদালত করেও মানুষকে সচেতন করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া অবৈধ পথে ভারত থেকে বাংলাদেশিরা আসছেন। আবার ভোমরা বন্দরে আসছেন ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে ভারতীয়রা। এসব কারণে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি করা যাচ্ছে না। এখন লকডাউন নিয়ে এ পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানো ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই। এ জন্য শনিবার থেকে সাত দিন লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। প্রয়োজনে লকডাউন বাড়ানো হবে।

লকডাউন চলাকালে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২ পর্যন্ত ৩ ঘণ্টা জরুরি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান খোলা থাকবে। এ ছাড়া বিপণিবিতানসহ অন্যান্য দোকানপাট বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া গণপরিবহনও বন্ধ থাকবে। লকডাউন চলাকালে গণমাধ্যমকর্মী, স্বাস্থ্যকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ছাড়া কেউ বাইরে বের হতে পারবে না।

সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদের আগের সপ্তাহে সাতক্ষীরায় করোনা সংক্রমণের হার ১৩ শতাংশ ছিল। ঈদের পর তা বাড়তে শুরু করে। মে মাসের শেষ সপ্তাহে এ হার দাঁড়িয়েছে ৪১ শতাংশে।

করোনা উপসর্গ নিয়ে তিনজনের মৃত্যু
করোনা উপসর্গ নিয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৯ ঘণ্টার ব্যবধানে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে গত ৪ দিনে করোনা উপসর্গ নিয়ে ১০ জন মারা গেলেন। আর এ পর্যন্ত করোনা উপসর্গ নিয়ে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন ২২২ জন।

মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন আশাশুনি উপজেলার গুনাকরকাটি গ্রামের আবদুল আলিম (৬৫), একই উপজেলার দরগাপুর গ্রামের জোহর আলী (৭৫) ও সাতক্ষীরা শহরের সুলতানপুর এলাকার লিয়াকত আলী (৭৫)।

সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন হুসাইন সাফায়াত জানান, এ পর্যন্ত সাতক্ষীরায় করোনায় ৪৭ জন এবং করোনার উপসর্গ নিয়ে ২২২ জন মারা গেছেন।

ভারত থেকে আসা দুই বাংলাদেশি আটক
বিজিবি সাতক্ষীরার ভোমরা ও তলুইগাছা সীমান্তে টহল দেওয়ার সময় দুই বাংলাদেশিকে আটক করেছে। তাঁরা অবৈধপথে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসছিলেন।
ওই দুজন হলেন সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলা সদরের ইমান গাজী (১৫) ও চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার গোবিন্দপুর মাঠপাড়া গ্রামের মো. মনিরুজ্জামান (২৫)।

বিজিবির ৩৩ ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, আটক ইমান গাজী ভোমরা সীমান্ত দিয়ে ও মো. মনিরুজ্জামান তলুইগাছা সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে ঢুকলে তাঁদের আটক করা হয়। তাঁদের মধ্যে মনিরুজ্জামানকে কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপিত কোয়ারেন্টিন সেন্টারে ও ইমান গাজীকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পদ্মশাখরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপিত কোয়ারেন্টিন সেন্টারে ১৪ দিন রাখা হবে। তারপর তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাতক্ষীরা বিজিবি ৩৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ আল মাহমুদ আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বর্তমানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কলারোয়া থানার সীমান্ত এলাকার সোনাই নদে মাছ ধরা, গোসল করা ও সন্ধ্যা সাতটার পরে জনসাধারণের অবাধ চলাফেরা ও দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়েছে।

Copyright © priyokagoj.com All Right Reserved.
Developed By Monoputo