আলু বীজের দামে বিপাকে কৃষক

উত্তরের জেলাগুলোতে শীত বইছে, আলু চাষের মৌসুমও শুরু হয়েছে। জয়পুরহাটের পাঁচটি উপজেলায় মাঠে মাঠে চলছে আলু রোপণের কাজ। অন্য বছরের চেয়ে এ বছর আলুবীজ, সারসহ চাষাবাদ খরচ বেশি হওয়ায় হতাশ জয়পুরহাটের কৃষক। কৃষকরা জানান, বীজ আলু কিনতে হচ্ছে ৪০ কেজির বস্তা ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি দামে। আবার রাসায়নিক সার প্রতি বস্তা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি মূল্যে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক। বিক্রয় রশিদও দেওয়া হচ্ছে না কৃষকদের। ফলে আগের বছরের তুলনায় এ বছর কৃষকদের প্রতি বিঘায় ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ বেশি হচ্ছে। জেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এবার জেলায় ৩৮ হাজার ৮১৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার নয়াপাড়া মাঠে কৃষকদের আলু রোপণের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নভেম্বরের শুরু থেকে আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। এরপরই কৃষকরা আলু রোপণের প্রস্তুতি নেন। এক সপ্তাহ ধরে তারা আলু রোপণ করছেন। তবে সার ও বীজ নিয়ে তাদের অভিযোগ রয়েছে। গত বছর এক বিঘা জমিতে আলু রোপণ বাবদ খরচ হয়েছিল ২৫ থেকে ২৬ হাজার টাকা। এবার সেখানে ৩৫ থেকে ৩৬ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। সার ও বীজ বেশি দামে ক্রয় করতে না হলে এবার তাদের অতিরিক্ত টাকা গুনতে হতো না। সদর উপজেলার হিচমী গ্রামের কৃষক আনিছুর রহমান বলেন, বাজারে এবার খাবার আলুর দাম বেশি ছিল। অনেকেই বেশি দামে বীজআলু খাবার হিসেবে বিক্রি করেছে। ফলে বীজআলুর সংকট দেখা দেয়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীরা বীজআলুর দাম বেশি নিচ্ছে। অনেকেই খাবার আলু বিভিন্ন হিমাগার থেকে বের করে নতুন নতুন কোম্পানির সিলমারা বস্তা ও ট্যাগ লাগিয়ে বীজআলু হিসেবে বিক্রি করছেন। বোঝার কোনো উপায় নেই। এতে কৃষকরা এবার সর্বস্বান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সার ডিলার তালুকদার রাইচ মিলের স্বত্বাধিকারী আবদুল্লা তালুকদার বলেন, আমি সরকার নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী সার বিক্রি করছি, মেমোও দিচ্ছি। তবে অনেকেই বেশি দামে সার বিক্রি করছে এটাও শুনেছি। কৃষকদের অভিযোগ মিথ্যা না। বিএডিসির ডিলার শাহিন ইসলাম বলেন, বীজআলু ও খাবার আলু  আলাদা। বীজআলুর সংকট নেই। সরকার নির্ধারিত দামেই বীজআলু বিক্রি করা হচ্ছে। প্রশাসনের লোকজন প্রতিনিয়ত আমাদের তদারকি করছেন। তবে অনেকেই আছেন, যাদের কোনো ডিলারশিপের প্রয়োজন হয় না। তারাই এসব কাজ করছেন। জয়পুরহাট কৃষি বিপণন অধিদফতরের কর্মকর্তা রতন কুমার রায় বলেন, দাম বেশি নেওয়ার অভিযোগে নিয়মিত বাজার তদারকি করা হচ্ছে।

জরিমানার সঙ্গে তাদের সতর্কও করা হচ্ছে। এবার আলু রোপণে খরচ বেশি হওয়ার কথা স্বীকার করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক রাহেলা পারভিন বলেন, ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রার ৫৫ থেকে ৫৬ শতাংশ জমিতে আলু রোপণ সম্পন্ন হয়েছে। যদি কেউ বেশি দামে সার ও বীজ বিক্রি করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

Copyright © priyokagoj.com All Right Reserved.
Developed By Monoputo