তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচক, ২০২৩: বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে পেছনে নিজস্ব প্রতিবেদকঢাকা

তামাক কোম্পানির অব্যাহত হস্তক্ষেপ তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে প্রধান বাধা হিসেবে কাজ করছে।

‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচক, ২০২৩’–এ বাংলাদেশের স্কোর ৭২, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি খারাপ। প্রতিবেদন অনুযায়ী চলমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন ঘিরে সবচেয়ে বেশি হস্তক্ষেপ হয়েছে। তিন বছরেও খসড়া সংশোধনী পাস করতে পারেনি সরকার। আজ গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স (আত্মা) আয়োজিত ‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচক: এফসিটিসি আর্টিক্যাল ৫.৩ বাস্তবায়ন প্রতিবেদন, বাংলাদেশ ২০২৩’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রজ্ঞার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য উঠে এসেছে।

এ বছর বিশ্বের ৯০টি দেশে এ গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকার তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ কীভাবে আমলে নেয় এবং হস্তক্ষেপ মোকাবিলায় কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তা এফসিটিসি আর্টিক্যাল ৫.৩ গাইডলাইনের আলোকে মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে এ গবেষণার মাধ্যমে। স্কোর যত কম, হস্তক্ষেপ তত কম। তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপের বৈশ্বিক সূচক ২০২৩ অনুযায়ী সবচেয়ে ভালো করেছে ব্রুনেই (স্কোর, ১৪) এবং সবচেয়ে খারাপ করেছে ডোমিনিকান রিপাবলিক (স্কোর, ১০০)।

বাংলাদেশের স্কোর ৭২, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ। প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) ২০১৮ সাল থেকে ‘তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ সূচক, বাংলাদেশ’ প্রকাশ করে আসছে। ব্লুমবার্গ ফিল্যানথ্রপিসের সহায়তায় এ গবেষণা কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা করেছে সাউথইস্ট এশিয়া টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যালায়েন্স (সিটকা) এবং গ্লোবাল সেন্টার ফর গুড গভর্ন্যান্স ইন টোব্যাকো কন্ট্রোল (জিজিটিসি)।

আজ প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি আরও বলেন, ‘আইন শক্তিশালীকরণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। তারপরও আইন সংশোধনে এত সময় লাগছে কেন? আমরা বলি, স্বাস্থ্য খাতে আমাদের অর্জন অনেক। তাহলে তামাকের কারণে এত মানুষ মারা যায়, আমরা কেন কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারি না। জনস্বাস্থ্যকে আমাদের প্রাধান্য দিতে হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, ‘তামাক কোম্পানি থেকে সরকারের শেয়ার প্রত্যাহার করতে হবে। তামাক কোম্পানিকে পুরস্কৃত করা যাবে না এবং সিএসআর কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে। কয়েক বছর ধরে আমরা এসব বলে আসছি, কিন্তু কাজ হচ্ছে না। হয়তো একসময় আমাদের নীতিনির্ধারক ও সরকারি দপ্তরগুলোতে যাঁরা আছেন, তাঁরা আমাদের কথা শুনবেন।’

জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী (অতিরিক্ত সচিব) হোসেন আলী খোন্দকার বলেন, ‘আইন সংশোধন প্রক্রিয়ায় আমরা অনেকটাই অগ্রগতি লাভ করেছি। তবে তামাক কোম্পানিগুলো বারবার বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের সজাগ থাকতে হবে।’

গ্লোবাল সেন্টার ফর গুড গভর্ন্যান্স ইন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (জিজিটিসি) হেড অব গ্লোবাল রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি মেরি আসুন্তা বলেন, ‘স্পষ্টতই বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো এশিয়া ও বাংলাদেশকে তাদের মুনাফা বাড়ানোর একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার হিসেবে পেতে চায়। কাজেই মুনাফা হুমকিতে পড়ে, এমন যেকোনো সরকারি পদক্ষেপকে চ্যালেঞ্জ ও বিরোধিতা করবে তারা।’

গবেষণায় দেখা গেছে, তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ মোকাবেলা এবং আর্টিক্যাল ৫.৩–এর নির্দেশনাবলি বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতিই হয়নি বাংলাদেশে। আইন সংশোধন হলে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাবে উল্লেখ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) চিঠি দেয় ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটিবি)। তামাক কোম্পনির এ ধরনের অপব্যাখ্যা আমলে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পরবর্তীকালে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে চিঠি দেয় এনবিআর। আইন সংশোধনের বিরোধিতা করে প্রধানমন্ত্রী বরাবর চিঠি দেয় জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি (নাসিব)। এ ছাড়া তামাক কোম্পানির মদদপুষ্ট বেশ কিছু তথাকথিত আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ই-সিগারেট নিষিদ্ধ না করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বরাবর চিঠি পাঠায় এ সময়। স্বাস্থ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, এমন মন্ত্রণালয়, সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার সঙ্গে বৃক্ষরোপণ, পানি বিশুদ্ধকরণ, সোলার প্যানেল, কোভিড ভ্যাকসিন রেজিস্ট্রেশন বুথ স্থাপন ইত্যাদি সিএসআর কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেখা গেছে কোম্পানিগুলোকে।

অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস, বাংলাদেশের টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার সৈয়দ মাহবুবুল আলম, আত্মার কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ, প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক, বি এম জুবায়ের। আত্মার কনভেনর মতুর্জা হায়দার অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। প্রজ্ঞার কো–অর্ডিনেটর নাফিউর আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন প্রজ্ঞার কর্মসূচিপ্রধান মো. হাসান শাহরিয়ার।

Copyright © priyokagoj.com All Right Reserved.
Developed By Monoputo